অভ্রপাড়ের রোদ্দুর

২১শে ফেব্রুয়ারী (ফেব্রুয়ারী ২০১২)

রনীল
মোট ভোট ১০৪ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৬.৩
  • ৪৯
  • ১৮৭
এক
অবনীকান্ত বাবুর বয়স ষাটের আশেপাশে। কালিগঞ্জ তরঙ্গিণী উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে বাংলা পড়ান। রোগাপাতলা গড়ন। এমনিতেই তাঁর ডায়বেটিসের সমস্যা আছে, শীতের সময়টাতে হাঁপানিতেও বেশ ভুগেন। বলা নেই, কওয়া নেই একদিন তিনি হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হলেন। টানা পাঁচদিন জ্বরে ভুগলেন। ষষ্ঠদিনে স্থানীয় ফার্মেসীর ডাক্তার সাহেব এসে তাঁকে পরীক্ষা করে ঘোষণা দিলেন- রোগী প্রাণঘাতি টাইফয়েডে আক্রান্ত, অতিদ্রুত তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার।
অবনীবাবু অকৃতদার, আত্মীয়-স্বজন বলতে গেলে কেউই প্রায় নেই। তরঙ্গিণী স্কুলের ধর্ম শিক্ষক মাওলানা কামালউদ্দিন এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলেন। ভ্যানে চাপিয়ে প্রবল জ্বরে অচেতন অবনীকান্ত বাবুকে নিয়ে গেলেন তিন মাইল দূরের সদর হাসপাতালে।
সদর হাসপাতালে এসে মাওলানা কামালউদ্দিন আসল সমস্যায় পড়লেন। উদরাময়, সাপে কাটা আর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নানান ধরনের রোগীতে হাসপাতাল গিজগিজ করছে। দুই-একজন ডাক্তার যাও আছেন, পুরোনো রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত- তাদের টিকিটির নাগাল পাওয়া গেল না।
মাওলানা কামালউদ্দিন আরও কিছুক্ষণ চেষ্টা করলেন, তারপর অচেতন প্রায় অবনীকান্ত বাবুকে হাসপাতালের করিডোরে শুইয়ে দিলেন।
প্রবল ঘোরের মাঝেও অবনীবাবু মাওলানা সাহেবের অসহায় অবস্থাটি অনুভব করেন, লজ্জিতভাবে বলেন-

- হুজুর... আপনে অনেক কষ্ট করেছেন, আমাকে এখানে রেখে আপনে চলে যান, এর বাইরে তো কিছু করার নয়।
-
মাওলানা কামালউদ্দিন বিরক্তভাবে মরণাপন্ন অবনীবাবুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন।

- বেশি কথা বইলেন না... আপনার ভগবানের নাম নেন। এই এলাকায় আমার পরিচিত একজন থাকে। ওর অনেক জানাশোনা। আমি দেখি ওনার কোন খোঁজ করা যায় কিনা। আপনে এইখান থেকে নইড়েন না।

অবনীবাবুর নড়াচড়া করার কোন সামর্থ্যই নেই। তিনি অনড়ভাবে হাসপাতালের অপ্রশস্ত বারান্দাতেই পড়ে রইলেন, কিন্তু মওলানা কামালউদ্দিন আর ফিরে এলেন না।
চারদিন পর তিনি ফিরে এসে দেখলেন অবনীবাবু ঠিক আগের জায়গাটিতে বসে বসে মনের আনন্দে কমলা ছিলে খাচ্ছেন। মওলানা সাহেবকে দেখে তিনি লজ্জিতভাবে তাকান।
- কমলা খাবেন হুযুর?

- কমলা পাইছেন কই?

- ওইযে একজন সিস্টার দেখতাছেন না- উনি দিছেন। এই কয়দিন উনি অনেক দেখাশোনা করছেন- বলতে গেলে ইনার সেবাতেই জীবনটা ফিরে পেলাম।

- বাজে কথা বলবেন না... জীবন মরণ সব আল্লাহপাকের হাতে।

কামালউদ্দিন ঘাড় ঘুরিয়ে সিস্টারটিকে লক্ষ্য করেন। মোটা, কালো- বদমেজাজী ধরনের চেহারা, বুড়োমতন একজন রোগীকে সমানে ধমকাচ্ছে। অবনীকান্ত বাবুর মতো অকিঞ্চিৎকর লোকের জন্য এই মহিলা এতোটা কেন করবে- সেটাও ভেবে দেখার মতো একটা বিষয়। গত চারদিন তিনি কেন হাসপাতালে এলেন না, সে ব্যাপারে কোন কারণ দর্শালেন না, অবনীবাবুও কিছু জানতে চাইলেন না।
অবনীবাবু দুর্বলভাবে ‘এই যে’ ‘এই যে’ বলে নার্সটির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। বদমেজাজী নার্সটি স্পষ্টত বিরক্ত হয়।

- চুপচাপ শুয়ে থাকেন। এতো কথা কিসের।

নার্সটির রূঢ় আচরণে অবনীকান্ত বাবুর মুখের হাসিটি অমলিন হয় না। মানুষের কাছ থেকে রূঢ় আচরণ পেতে পেতে তিনি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তবে অবিরত রূঢ় আচরণের ফাঁকে ফাঁকে তিনি কিছু সহানুভূতি, কিছু ভালোবাসাও পেয়েছেন। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এসব ভালোবাসা পেয়েই অবনীবাবু অভিভূত হয়ে যান। এর বাইরের অন্যান্য তিক্ত ব্যাপারগুলো তাঁর আর মনে থাকেনা।

- মওলানা সাব, যদি কিছু মনে না করেন, একটা কথা বলতে চাই।

- কিছু বলতে চাইলে বলেন... এতো পারমিশান চাইবার কি আছে?

- আসলে... মানে হইছে কি... গতরাতে একটা স্বপ্ন দেখলাম। শুনছিলাম টাইফয়েডে নাকি মানুষের একটা না একটা কিছু যায়ই, আমার ক্ষেত্রে মনে হয় মাথাটা পুরোপুরিই গেছে... ইদানিং খালি উল্টাপাল্টা সব স্বপ্ন দেখি। খুব খারাপ স্বপ্ন। স্বপ্নে দেখি- খুব বৃষ্টি হইছে, একেবারে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি যারে বলে আরকি। বৃষ্টির তোড়ে নিশী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গেসে... পানির তোড়ে পুরা কালিগঞ্জ একেবারে ভেসে গেসে... স্বপ্নটা এতো স্পষ্ট যে মনে হলো সত্যি সত্যি দেখলাম সব। গ্রামের খবর সব ভালো তো? নদীর বাঁধটা ঠিকঠাক আছে তো?

কামালউদ্দিন একমুহূর্ত স্থিরভাবে অবনীবাবুর দিকে তাকিয়ে থাকেন, তারপর ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলেন-

- জানিনা ব্যাপারটা কীভাবে ব্যাখ্যা করব, তবে গ্রামের অবস্থা ভালো না। নিশী নদীর পানি বাঁধের মাথা প্রায় ছুঁইছুঁই করত্যাছে। গ্রামের লোকজন বালির বস্তা ফেলে বাঁধটা বাঁচানোর চেষ্টা করতাছে, তবে শেষ রক্ষা মনে হয় হবে না।

কামালউদ্দিন সেদিনই অবনীবাবুকে ভ্যানে চড়িয়ে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। ঠিক ওই রাতেই কালিগঞ্জ গ্রাম সংলগ্ন নিশী নদীর বাঁধটি বৃষ্টির তোড়ে ভেঙ্গে গেলো। বানভাসী জলে কালিগঞ্জ গ্রামের পথঘাট, ঘরবাড়ী, ফসলের জমি যখন ভেসে যাচ্ছিল- ঠিক তখনই অবনীকান্ত বাবু তাঁর বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমের মাঝে দ্বিতীয় স্বপ্নটি দেখলেন।
স্বপ্নটি কিছুদূর দেখে তিনি স্বপ্নের মাঝেই হেসে ফেললেন। স্বপ্নে দেখলেন তিনি একটা গাড়ি কিনেছেন। লাল রঙের ছিমছাম একটা গাড়ি। দলে দলে গ্রামবাসী আসছে সেই গাড়ি দেখার জন্য। সকল তোড়জোড় শেষ করে ড্রাইভিং সিটে বসে হঠাৎ তিনি উপলব্ধি করলেন যে- তিনি গাড়ি চালাতে জানেন না। স্কুলের দপ্তরি জয়নাল পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। অবনীবাবু তাকে জিজ্ঞেস করলেন-

জয়নাল তুমি গাড়ি চালাতে জানো?

- হ্যা স্যার, জানি। তয় একটা মিনিট সময় দেন, আমি একটু প্রসাব করে আসতাছি।

অবনীবাবু গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে জয়নালের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। জয়নালের আর ফেরার নাম নেই। এদিকে গাড়ি দেখতে আসা লোকজন হঠাৎ কেন যেন ক্ষেপে যায়। কয়েকজন লাঠিসোটা নিয়ে অবনীকান্ত বাবুর গাড়ির দিকে তেড়ে আসে। অবনীবাবু গাড়ি বাঁচাবেন না নিজে পালিয়ে বাঁচবেন- এই দোটানায় ভুগতে থাকেন। ক্রুদ্ধ জনগণের মধ্যে কমবয়সী একজন এগিয়ে এসে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে দেয়।
সাথে সাথে তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভেঙ্গে যাবার পরও তিনি টের পান লোকজনের শোরগোল এখনও শোনা যাচ্ছে।
মুহূর্তের মধ্যে তিনি বুঝে ফেলেন- নিশী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। অবনীবাবু ধড়মড় করে উঠে বসলেন। বুকের ভেতর থেকে শোঁ শোঁ শব্দ বের হয়ে আসছে। ক’দিন ধরে হাঁপানিটা বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অবনীবাবু আলনা থেকে ভারী চাদরটা নিয়ে গায়ে জড়ান। বাইরে সমানে বৃষ্টি ঝরছে। এই বৃষ্টিতে চাদর গায়ে বের হবার কোন মানেই হয় না। তিনি আবার চাদরটা খুলে ভাঁজ করে আলনায় রেখে ঘোর বৃষ্টির মাঝে বের হয়ে পড়লেন।


দুই
পরদিন অবনীবাবুর ঘুম ভাঙল বেশ বেলা করে। প্রথম পিরিয়ডে ক্লাস টেনের একটা ক্লাস ছিল। সামনেই মাধ্যমিকের ফাইনাল, অবনীকান্ত বাবু বেশ লজ্জিত বোধ করেন। এই ক’দিন অবশ্য স্কুলের হেডমাস্টার আজিজুর রহমান সাহেব তাঁর ক্লাসগুলো নিয়েছেন। অবনীকান্ত বাবু তারপরও স্বস্তিবোধ করলেন না। হেডমাস্টার সাহেব মূলত ইংরেজীর শিক্ষক। বেশভালো ইংরেজী বলেন। বাংলা, ধর্ম, সমাজ বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোর প্রতি তাঁর কিছুটা অবজ্ঞার ভাব আছে।
অবনীকান্ত বাবু ধড়মড় করে উঠে বসলেন। স্কুলে এসে দেখলেন- প্রথম পিরিয়ডের ক্লাস ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। কমনরুমে বসে তিনি পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছিলেন, এমন সময় দপ্তরি জয়নাল এসে জানালো- হেডমাস্টার সাহেব তাঁকে ডাকছেন।
হেডমাস্টার সাহেবকে অবনীকান্ত বাবু কিছুটা ভয় পান। রাশভারী ধরনের লোক, অপ্রয়োজনীয় কথা পছন্দ করেন না।
- কি ব্যাপার অবনীবাবু- শুনলাম শরীর সেরে গেছে, সকালে ক্লাসে আসলেন না কেন?

- ইয়ে... মানে... স্যার, কালকে রাতে নিশী নদীর ওখানে গেছিলাম। সকালে আর দিশা পাই নাই...

- আপনি বৃদ্ধ মানুষ, তার উপর অসুস্থ... ওইখানে গিয়ে আপনি করছেনটা কি?

অবনীকান্ত বাবু মাথা নিচু করে বসে থাকেন, কি বলবেন বুঝে উঠতে পারেন না।

- সামনে ফাইনাল পরীক্ষা, এখন যদি এরকম বিনা নোটিশে উধাও হয়ে যান- তাহলে তো সমস্যা... কি ব্যাপার! ঘরঘর শব্দটা আসতেছে কোথা থেকে?

- ইয়ে মানে স্যার, কালকে বৃষ্টিতে ভেজার পর থেকে হাঁপানির সমস্যাটা একটু বাড়ছে...

হেডমাস্টার সাহেব অবিশ্বাসভরে অবনীবাবুর দিকে তাকিয়ে থাকেন।

- কিছু বলার নাই... দেখেন, আপনার যদি শরীর বেশি খারাপ হয়, তাহলে ছুটি নেন। আমরা অল্টারনেটিভ একটা ব্যবস্থা করি। আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা। স্কুলের মেইন বিল্ডিংটা এক্সটেনশন হবে। আপনিতো অনেকদিন ধরে স্কুলের স্টোর রুমটা দখল করে রাখছেন। ওইটা ছেড়ে দিতে হবে। আপনার অন্য কোথাও যাবার ব্যবস্থা আছে?

অবনীবাবু কোন জবাব দিতে পারেন না, শুধু লজ্জিতভাবে তাকিয়ে থাকেন। তাঁর আর কোথাও যাবার জায়গা নেই।
হেডমাস্টার সাহেব হতাশভাবে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকেন-

- তাহলে এক কাজ করেন, অফিসরুমের ভেতরটায় জয়নাল রাতের বেলা ঘুমায়। আপনি দ্যাখেন ওইখানে একটা চৌকী ফেলতে পারেন কিনা... ঠিক আছে, এখন আপনি যান।

আজকে তাঁর আর কোন ক্লাস নেই। অবনীবাবু স্কুল থেকে বের হয়ে আসলেন। স্কুলের মেয়েদের গেটের সামনে একদঙ্গল ছেলেপেলে ভিড় করে আছে। এদের অনেকে একসময় তাঁর ছাত্র ছিল। অবনীবাবুকে তারা দেখেও দেখলনা।

তিন
অন্যান্য গড়পড়তা বৃদ্ধের মতো সকালবেলা পত্রিকা নিয়ে বসা অবনীবাবুর ও প্রিয় কাজগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু টিচার্স কমনরুম কিংবা পাড়ার ফার্মেসী- যেখানেই যান না কেন, একটু আয়েশ করে পত্রিকা পড়ার কোন উপায় নেই। সবজায়গাতেই কিছু না কিছু বাতিকগ্রস্ত বুড়ো থাকবে- নতুন পত্রিকা আসামাত্রই হামলে পড়বে।
ঘড়িতে বাজে সাড়ে আটটা। টিচার্স কমনরুমে ইতিমধ্যে দু’তিনজন শিক্ষক চলে এসেছেন। পত্রিকাওয়ালা ছোকরাটা এইমাত্র এসে পত্রিকা দিয়ে গেল। সাথে সাথে সেটা নিয়ে বুড়োদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে গেল। অবনীবাবু ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে এক কোণে এসে বসলেন।
সকালবেলা শরীরের জড়তা কাটানোর জন্য প্রয়োজন বিশেষ উষ্ণতার। শুধু চায়ের কাপের উষ্ণতায় সে কাজ হয় না, দরকার হয় নতুন কড়কড়ে পত্রিকার উত্তাপ। অবনীবাবু কখনোই উচ্চাভিলাষী ছিলেন না, তাঁর স্বপ্নগুলো সব ছোট ছোট। এর মধ্যে একটি স্বপ্ন হচ্ছে- তিনি তাঁর নিজস্ব বাড়ির উঠোনে বসে আরামসে পত্রিকা পড়ছেন, সাথে গরম চায়ের কাপ।
অবনীবাবুর অজস্র ব্যর্থ স্বপ্নের মতো এটিও কখনো পূরণ হবার নয়। তাঁর নিজস্ব কোন ঘরবাড়ী নেই, স্কুলের টয়লেটের সাথে লাগোয়া পরিত্যক্ত একটি গুদামঘরে জীবনের মোট সময়ের একটা বড় অংশ তিনি খরচ করে ফেলেছেন। বাকী যে সময় অবশিষ্ট আছে- তাতে নতুন একটা ঘর বানানো আর সম্ভব নয়। সামান্য যে বেতন পান- তাতে নিজের জন্য আলাদা একটা পত্রিকা রাখাও তাঁর জন্য সম্ভব হয় না।
স্কুলের মর্নিং শিফট শুরু হয় সকাল ন’টায়। আয়েশ করে পত্রিকা পড়ার অভিলাষে অবনীবাবু প্রায়ই সকাল আটটার দিকে চলে আসেন। পেপারওয়ালা ছোকরাটা মাঝে মাঝে আগেভাগে পত্রিকা নিয়ে চলে আসে, তবে বেশীরভাগ দিনই সে সাড়ে আটটা/ ন’টা বাজিয়ে দেয়। অবনীবাবু প্রায়ই ছোকরাকে অনুরোধ করেন, গায়ে হাত বুলিয়ে দেন। ছোকরা বিরক্তভাবে তাঁর অনুরোধ শোনে, পরদিন আবার যথারীতি দেরী করে আসে। পত্রিকাওয়ালা ছোকরার এই দেরী করে আসার সাথে স্কুলের মেয়েদের ক্লাসে আসার সময়সূচীর কোন বিষয় সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা- অবনীবাবু তা কখনো অবশ্য ভেবে দেখেননি।
টিফিন পিরিয়ডের আগ পর্যন্ত আজ তাঁর কোন ক্লাস নেই। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পত্রিকাটি হাতে পাবার কোন সম্ভাবনা নেই। পত্রিকায় আজকের হেড নিউজটি বেশ চাঞ্চল্যকর। পাকিস্থানে সেনাবাহিনী আবার বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে, খুব শীঘ্রই হয়তো আবার তারা ক্ষমতা দখল করে নেবে। উপস্থিত শিক্ষকরা এই বিষয়টি নিয়ে তুমুল আড্ডায় মেতে ওঠেন। আড্ডার একপর্যায়ে শিক্ষকরা দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে তর্কে মেতে উঠেন। একপক্ষ পাকিস্থানপন্থী, অন্যটি ভারত। তুমুল হট্টগোলের মধ্যেই অবনীকান্ত বাবু একসময় ঢুলতে থাকেন। নিদ্রা জাগরণের একপর্যায়ে তিনি ছোটখাটো একটি স্বপ্নও দেখে ফেললেন। স্বপ্নে দেখলেন তিনি বিয়ে করেছেন, নবপরিণীতা স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বাসরঘরে বসে আছেন। স্বপ্নের মাঝে তিনি অনুভব করেন তাঁর বয়স কমে গেছে, মাথার চুলগুলো সব কালো, হাতের কব্জিতেও বেশ জোর।
টাইফয়েডে আক্রান্ত ও আরোগ্য লাভের পর থেকে আজকাল বেশ নিয়মিতভাবেই তিনি স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্ন অবশ্য তিনি আগেও দেখতেন, তবে এই স্বপ্নগুলো তাঁর আগের স্বপ্নগুলো থেকে বেশ আলাদা।
স্বপ্নের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে তিনি বেশ বুঝতে পারেন যে এটা একটা স্বপ্ন। বেশীরভাগ স্বপ্নই অর্থহীন, বিভ্রান্তিকর। তবে কিছু কিছু স্বপ্ন আবার বেশ স্পষ্ট এবং ইঙ্গিতপূর্ণ। এ নিয়ে অবনীকান্ত বাবু বেশ চিন্তায় পড়ে যান। দিনরাত শুধু স্বপ্নের মানে নিয়েই চিন্তা করেন। স্বপ্নদৃশ্যের অর্থ ও মাহাত্ম্যের উপর নাকি কিছু বইও আছে। অবনীবাবু ভাবছেন- বইটা একবার সংগ্রহ করবেন। স্বপ্নের ব্যাপারটি নিয়ে কারো সাথে আলাপ করতে ইচ্ছে করে, কিন্তু তিনি একলা মানুষ। তারপরও জয়নাল সহ দুই একজনের সাথে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সকলেই কমবেশী তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
স্বপ্নদৃশ্যের একপর্যায়ে তিনি তাঁর নবপরিণীতা স্ত্রীর ঘোমটা খুলে ধরেন। নিঃসীম রাতের নিবিড় শশীর মতো আলোকিত একটি মুখ সামনে ভেসে উঠে। অবনীকান্ত বাবু প্রচন্ডভাবে চমকে উঠেন, হাত থেকে ঘোমটার অংশটুকু খসে পড়ে- মুহূর্তেই তিনি স্বপ্নদৃশ্যটি থেকে জেগে ওঠেন।
কমনরুমের অন্যান্য শিক্ষকরা আগের মতোই আলোচনায় মত্ত, কেউই তাঁকে খেয়াল করেনি। তবুও অবনীকান্ত বাবুর ভেতরটা অনুতাপে ভরে যায়। স্বপ্নদৃশ্যে দেখা তাঁর নবপরিণীতা স্ত্রীটি আর কেউ নয়, তাঁরই ক্লাসের একজন ছাত্রী। এবার মাধ্যমিকে ফাইনাল দেওয়ার কথা- নাম সুহাসীনি।
সুহাসীনি শৈশবে অনাথ হয়েছে, থাকে মামার আশ্রয়ে। দারিদ্রতা, বঞ্চনা, মামা-মামীর অনিচ্ছা- এরকম শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মেয়েটি কখনো মাথা নোয়াইনি। রোজ দেড় কিলোমিটার হেঁটে গ্রাম থেকে এসে ক্লাস করে। তার অপূর্ব মুখশ্রী, রূপ দেখে গ্রামের বখাটেরা তার পিছু নেয়, পথরোধ করে। সুহাসীনি বিনা প্রতিবাদে সব সহ্য করে। অতি উৎসাহী কেউ কেউ অশোভন মন্তব্য করে, ফুল ছুঁড়ে মারে, হাতে চিঠি গুঁজে দেয়। সুহাসীনি কোন প্রতিবাদ করে না, হাতে গুঁজে দেয়া চিঠিও ফেলে দেয় না। জ্ঞান অর্জনের অভিপ্রায়ে যেন সে সকল শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছে।
তেজস্বিনী সুহাসীনির একাগ্রতা দেখে অবনীকান্ত বাবুর চোখে জল এসেছে কতবার। কতোদিন তিনি চেষ্টা করেছেন সুহাসীনির পাশে দাঁড়াতে।
সেই সুহাসীনিকে তিনি আজ এভাবে স্বপ্নে দেখলেন! তবে কি তিনি মনে মনে ওকে কামনা করেছিলেন! এই স্বপ্নটি কি তার অবরুদ্ধ কামনার বহিঃপ্রকাশ? অবনীকান্ত বাবু চরম অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকেন।
গভীর রাতে তিনি অফিসরুমে কোনরকমে ঠেসেঠুসে ফেলে রাখা চৌকিটিতে শুয়ে শুয়ে দপ্তরি জয়নালকে সব খুলে বলেন। জয়নাল কম কথার মানুষ। অবনীবাবুর বোধহীনতায় সে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়। রক্তচক্ষু মেলে সে বলে-

- আপনার মাথাডা মনে হয় পুরাপুরিই গেছে। এই বুড়া বয়সে বিয়ার নাম লন! আল্লাহ্‌-খোদার নাম নেন, পারলে একজন ভালো ডাক্তার দেখান।

পরদিন একদম সকাল সকালই হেড মাস্টার সাহেবের কামরায় অবনীকান্ত বাবুর ডাক পড়লো। আজিজুর রহমান সাহেব গম্ভীরমুখে পত্রিকা পড়ছিলেন, তাঁকে দেখে পত্রিকাটি একপাশে সরিয়ে রাখলেন-

- বসেন, শরীর এখন কেমন?

- জ্বি ভালো স্যার।

- আজকে কোন ক্লাস আছে?

- জ্বি আছে, ফার্স্ট পিরিয়ড, ক্লাস টেন।
- আপনে একটা কাজ করেন, কয়দিন ছুটি নেন, ভালো ডাক্তার টাক্তার দেখান। শুনলাম আজকাল নাকি বিয়ে-শাদীর চিন্তা-ভাবনা করছেন।

অবনীবাবু কোন জবাব দেন না, বিমূঢ়ভাবে চেয়ে থাকেন কেবল।

- আপনে একজন শিক্ষক মানুষ। চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা একটু বুঝে শুনে বলা ভালো। রিটায়ারমেন্টের তো বেশি দিন বাকী নাই, এই ক’টা দিন আর ক্লাসটাস নেবার দরকার নাই। আপনার টাকা পয়সার ব্যাপারস্যাপার আমি দেখতেছি, ক্লাসগুলোও আমি চালায়ে নিব। আর হ্যা, বিকেলে স্কুল কমিটির মিটিং আছে। লাস্ট ক্লাসটায় আমি আর থাকতে পারবোনা, আপনি একটু ক্লাসটা নিবেন, পারবেন না?

- জ্বি স্যার পারবো।

- ঠিক আছে, আপনি এখন যান।

অবনীবাবু সারাটা দিন কমনরুমে চুপচাপ বসে রইলেন। শেষ বিকেলের দিকে ক্লাসে গিয়ে দেখেন ছাত্রছাত্রী সব চলে গেছে। কাকতালীয়ভাবে শুধু সুহাসীনি একা একা বই খুলে বসে আছে।
অবনীবাবুর চোখে জল আসতে চায়। একটা মেয়ে পুরো পৃথিবীর সাথে লড়ছে জ্ঞান অর্জনের অভিপ্রায়ে, আর তিনি কিনা...

- কেমন আছো গো মা জননী...

সুহাসীনি নিরুত্তর।

- ফাইনালের তো আর বেশি সময় নাই... পড়াশোনা ঠিকঠাক করতেছো তো! ইংলিশটা ঠিকঠাক পড়তো?

প্রায় শোনা যায় না- এমন স্বরে সুহাসীনি জবাব দেয়-

- কম্প্রিহেনসন পার্টটা নিয়ে একটু সমস্যায় আছি স্যার। নতুন সিলেবাস তো, প্রশ্নের ধারাটা ঠিক বুঝতে পারতেছি না।
অবনীবাবু ইংরেজীতে এমনিতেই বেশ দুর্বল, সুহাসীনি থেকে বইটি নিয়ে তিনি কিছুক্ষণ এলোমেলোভাবে পৃষ্ঠা ওল্টালেন। অনভ্যস্ততার কারণে তিনি কিছুই বুঝতে পারলেন না।
সুহাসীনি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে থাকে। অবনীবাবু ব্যর্থ আক্রোশে আরও কিছুক্ষণ বইয়ের পাতা ওল্টাতে থাকেন, দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা বইটিতে বিন্দুমাত্র দাঁত ফোটাতে পারেন না।
এই করতে করতে একসময় তার আবার তন্দ্রা চলে আসে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আবার তার বিয়ের স্বপ্নটি দেখে ফেলেন।
স্বপ্নের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন, এই স্বপ্নটি দেখা তার পক্ষে উচিৎ হচ্ছে না। অবগুণ্ঠন সরানোর দৃশ্যটি আসতেই তিনি ভয়াবহভাবে চমকে উঠলেন। সুহাসীনির অপরূপ মুখশ্রীটি এখন আর দেখা যাচ্ছে না, সেখানে এখন ভাসছে বীভৎস এক প্রেতিনীর মুখচ্ছবি। সমস্ত মুখের চামড়া ভয়াবহভাবে ঝলসে গেছে। মাথার কালো দীঘল চুল সব উধাও, দুই এক গাছি এখনও কোনরকমে অবশিষ্ট আছে।
স্বপ্নের আকস্মিকতায় অবনীবাবু প্রচণ্ডভাবে জেগে উঠেন। সুহাসীনি আগের মতোই মাথা নিচু করে বসে আছে। স্কুলঘর সংলগ্ন জামের বাগান থেকে মৃদু পায়ের শব্দ ভেসে আসে। সুহাসীনি আগের মতোই অনড়।
ভূতগ্রস্তের মতো অবনীবাবু ঝটকা মেরে উঠে বসেন।
পায়ের শব্দগুলো ক্রমশ কাছাকাছি এগিয়ে আসে। অবনীবাবু পড়িমরি করে ছুটতে থাকেন। আততায়ীর দলটি পূবের জানালা দিয়ে দৃশ্যমান হয়।
গামছায় মুখ ঢাকা, হাতের কাঁচের জারে ধারন করা তরল থেকে সর্পিলাকারে ধোঁয়া বের হতে থাকে।

- বাবারে এমনটা করিস না... তোদের দোহাই লাগে।

অবনীবাবু দৌড়ে গিয়ে সুহাসীনিকে আড়াল করে নিজের পিঠটি এগিয়ে দেন। আততায়ীর দলটি শেষ মুহূর্তে কোনরকমে নিজেদের সংবরণ করে। বইয়ের হরফে ডুবে থাকা সুহাসীনির ধ্যান ভঙ্গ হয়, তার আর্তচিৎকারে জীর্ণ কামরা, জামের বন বিদীর্ণ হয়। আততায়ীর দলটি পায়ে পায়ে জায়গাটি থেকে সরে আসে।






চার
তরঙ্গিণী উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের ছোট মাঠটি সহস্র মানুষে ছেয়ে গেছে। কালিগঞ্জ গ্রামের যতো মানুষ আছে, সবাই একযোগে ছুটে এসেছে। সকলেই একসাথে লম্পট শিক্ষকের বিচার দাবী করছে।
অবনীবাবু কমনরুমের এককোণে চুপচাপ বসে আছেন। স্কুল কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার বেশ করিৎকর্মা লোক। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি পুলিশ প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করেছেন। ক্রুদ্ধ লোকজন পুলিশের প্রহরা ভেঙ্গে ঢুকে পড়তে চায়।

- অবনীবাবু আপনে এইটা একটা কাজ করলেন, স্কুলের ব্যাপারটা একবারও ভাবলেন না। পাবলিক দেখছেন কেমন ক্ষ্যাপা খেপছে! এ ব্যাপারে আপনার কি কিছু বলার আছে?

অবনীবাবু কি বলবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। স্বপ্নদৃশ্যটির কথা এখানে বলার কোন মানেই হয় না, সবাই ভাববে তিনি নিজের দোষ আড়াল করার জন্য উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করেছেন। কেউই তাঁকে বিশ্বাস করবে না।

- স্যার, আমার একটু টয়লেটে যাওয়া প্রয়োজন, ডায়াবেটিসের রোগী। বেশীক্ষণ চেপে রাখতে পারবো না।

অবনীবাবুর জবাবে স্কুল কমিটির লোকজনের বিস্ময় আকাশ স্পর্শ করে, দুই একজন ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায়।

- এই হলো এক নতুন সমস্যা, ঢাকায় নাকি এরকম অহরহ হইতাছে, আপনে সেইটা আজকে গ্রামে আমদানী করলেন। এখন আপনারা বলেন- এই লোককে এখন কী করা যায়?

বাইরে অপেক্ষমাণ সহস্র জনতার ক্রোধের উত্তাপের কিছুটা স্কুল কমিটির সদস্যদের উপর চলে আসে। অবনীবাবু আরও কিছুক্ষণ বাক্যবাণে জর্জরিত হন, তারপর তাঁর গুরুতর অপরাধের শাস্তি স্বরূপ চাকরী থেকে বরখাস্ত হলেন। মিটিং একসময় শেষ হয়। অবনীবাবু টলোমলো পায়ে কমনরুমটি থেকে বের হয়ে আসেন। অপেক্ষমাণ জনতার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। সবাই একযোগে অবনীবাবুর দিকে তেড়ে আসতে চায়, অশ্রাব্য গালাগালিতে চারপাশ ভরে যায়।
অবনীবাবু দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাবের বেগ দমন করে ছিলেন। কমনরুমের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। তরঙ্গিণী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক শ্রী অবনীকান্ত দাশের দুর্দশার চূড়ান্ত রূপটি দেখে ক্ষুব্ধ জনতার ক্রোধ কিছুটা প্রশমিত হয়।


পাঁচ
অবনীবাবুর শেষ পরিণতিটি ছিল বড় করুণ। স্কুল কমিটির সদস্যরা দয়াবশঃত তাঁকে শুধু চাকরী থেকে বরখাস্ত করেছিলেন, পুলিশ কেইস করেননি। চাকরী, থাকার আশ্রয় হারিয়ে ক’দিন তিনি এলোমেলোভাবে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করেন। তাঁর এই দুর্দশায় স্কুলের ধর্মশিক্ষক মওলানা কামালউদ্দিন আবার এগিয়ে আসেন। স্ত্রী, প্রতিবেশী, সহকর্মীদের অজস্র আপত্তি উপেক্ষা করে তিনি অবনীবাবুকে তাঁর ঘরে আশ্রয় দেন। মওলানা সাহেবের আশ্রয়ে থাকাকালীন সময়েই অবনীবাবুর পুরোপুরি মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। স্ত্রীর সাথে মওলানা সাহেবের বিরোধ চরমে উঠলো। তার স্ত্রীর অভিযোগটিও অবশ্য একেবারে উপেক্ষা করা যায় না। অবনীবাবু ততোদিনে পুরোপুরি উন্মাদ। যখন তখন ঘরদোর নোংরা করে ফেলেন, ছোট ছোট বাচ্চাদের দিকে তেড়ে যান।
বাধ্য হয়ে মওলানা কামালউদ্দিন তাঁকে একদিন এক শীতের সকালে থানা সদরের বাজারটিতে রেখে আসেন। অবনীবাবুর দিন কাটতে লাগলো খোলা আকাশের নিচে।
কথিত আছে, মানুষ পাগল হয়ে গেলে শারীরিকভাবে দ্বিগুণ সক্ষম হয়ে উঠে। অবনীবাবুর ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি পুরোপুরি খাটলো না।
খোলা আকাশের নিচে দুইদিন থেকে তৃতীয় দিনের সময় তিনি প্রচণ্ড জ্বর-শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলেন। স্থানীয় লোকজন যখন তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেল- তখন তাঁর কেবল প্রাণটাই অবশিষ্ট আছে, বুক থেকে ক্রমাগত ঘরঘর শব্দ বের হচ্ছে।
হাসপাতালের সেই বদমেজাজী কালো নার্সটি তাঁকে সে অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় আবিষ্কার করেন। অবনীবাবুকে একনজর দেখেই তিনি বুঝে নেন- তাঁর সময় ফুরিয়ে এসেছে। অসহায় বৃদ্ধের করুণ রূপ দেখে দুর্বিনীত নার্সটির মনে করুণার উদ্রেক হয়। সম্ভব নয় মেনেও তিনি খানিকক্ষণ এদিক ওদিক ছোটাছুটি করেন, অবনীবাবুর শেষ সময়ে একটা কিছু করার চেষ্টা করেন।
সেদিন হাসপাতালে কোন ডাক্তার আসেনি। ইউনিয়নের লোকজন ছোটাছুটি করছে একুশের প্রভাতফেরীর আয়োজন নিয়ে।
ইউনিয়ন মেম্বারদের কড়াকড়ি আর রক্তচক্ষু অগ্রাহ্য করে নার্সটি আর বেশীক্ষণ থাকতে পারলেন না।
হাসপাতালের অপ্রশস্ত বারান্দাটিতে অসহায়ভাবে শুয়ে শুয়েই অবনীবাবু রওনা হলেন অদেখা এক জগতের দিকে। পুষ্পস্তবক হাতে নিয়ে প্রভাতফেরীর লোকজন শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যায়। তাদের কেউ জানতে পারল না, কিংবা কখনো জানতে ও পারবে না যে- একটু আগে হাসপাতালের বারান্দায় মরে যাওয়া বৃদ্ধটি একসময় কালিগঞ্জ তরঙ্গিণী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা পড়াতেন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জুনায়েদ বি রাহমান ফাহমিদা বারী আপুর একটা কমেন্টে গল্পটা সম্পর্কে শুনে এখানে আসা। অসাধারণ একটা গল্প।
Fahmida Bari Bipu লেখাটি আবার পড়লাম, এবং আবারো ভাষা হারিয়ে ফেললাম। আমার এই পর্যন্ত পড়া গক'র গল্পগুলোর মধ্যে এটি সেরা। আপনি আবার নিয়মিত লিখবেন এই প্রত্যাশা করছি।
Fahmida Bari Bipu প্রশংসার ভাষাটুকুও হারিয়ে ফেললাম। লেখাটি অনেক উঁচুমানের। আপনার লেখা নিয়মিত পড়তে চাই গল্প-কবিতায়।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৬
শামীম খান দারুণ গঠনশৈলী আপনার । গল্প পড়তে পড়তে হারিয়ে যাই কাহিনীর মাঝে । গল্পকবিতায় লেখা পাচ্ছিনা কেন ? অশেষ শুভকামনা ।
নাজনীন পলি লেখাটা প্রকাশিত হওয়ার প্রায় এক বছর পর, একজন পাঠিকা মুগ্ধ হয়ে আপনার লেখা " অভ্রপাড়ের রোদ্দুর " পড়লো ।
মালঞ্চ অসাধারণ লেখনীর গুণে আমিও স্তব্ধ হলাম !! শুভেচ্ছা জানাই----
আহমেদ সাবের গত মাসে অনেকের লেখাই পড়তে পারিনি। বিজয়ী হবার জন্যে প্রাণ ঢালা অভিনন্দন।
রওশন জাহান অনেকদিন আগে হুমায়ন আহমেদের একটি উপন্যাস পড়েছিলাম এরকম একজন মানসিক সমস্যা আক্রান্ত শিক্ষককে নিয়ে। গল্পের শুরুটা দেখে তাই একটু হতাশ হয়েছিলাম । কিন্তু শেষে এসে ভালই চমক দেখালে। লেখা চালিয়ে যাও । আমার শুভ কামনা থাকল।
ভালো লাগেনি ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

০৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩১ টি

সমন্বিত স্কোর

৬.৩

বিচারক স্কোরঃ ৩.৮ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৫ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪